আইন প্রয়োগ ও পালনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী বলেছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে সততা ও নৈতিকতা না থাকলে সে ব্যবসা ধ্বংস হতে বাধ্য।জনস্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে কিছু ব্যবসায়ী অনৈতিকভাবে লাভবান হয়ে প্রাডো-পাজেরো গাড়ি ব্যবহার ও বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে জীবনযাপন করছে। ট্যারিফ কমিশনসহ প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে নির্ভেজাল ও বিশুদ্ধ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত এবং অতি উচ্চহারে মুনাফা রোধে কঠোর নজরদারি ও অনুশাসন প্রয়োগ করতে হবে ।
বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনে মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর, ২০২৪ ইং) “ব্যবসা ও বিনিয়োগ কার্যক্রমে সহায়তা” শীর্ষক এক অধিবেশনে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, শুল্ক ছাড়ের পরও যদি পণ্য মূল্য না কমে, সেক্ষেত্রে ভোক্তা, জনসাধারণ, ব্যবসায়ী ও স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে সমস্যার গভীরে যেয়ে তা’ উদ্ঘাটন ও নিরসন করতে হবে। শুধু পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ নয়, রাসায়নিক মিশ্রিত, দূষিত ও নিম্নমানের খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ রোধে বিএসটিআই ও মোবাইল কোর্টসহ কঠোর অভিযানের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারি অফিসে ঘুষ ও ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেফতার ও বিচার করতে হবে। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবে রাইস ব্র্যান অয়েল উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে হবে। জলপাই তেল ও উদ্ভিদজাত তেল আমদানীতে শুল্কহ্রাসের বিষয় বিবেচনা করতে হবে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জলপাই তেল অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর মর্মে প্রমাণিত হয়েছে। পার্বত্য এলাকাসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জলপাই চাষ উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি মন্ত্রণালয় অনুকূল নীতিমালা প্রণয়ণ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ধান উৎপাদনে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয় বিধায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। সুতরাং ভাতের বিকল্প হিসেবে পর্যায়ক্রমে আলু খাবার অভ্যাস বাড়াতে হবে। দেশে প্রচুর আলু উৎপাদিত হয়, কিন্তু আলুর পর্যাপ্ত সংরক্ষণ ব্যবস্থা নেই, হিমাগারে সংরক্ষণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। খাদ্যে ভেজাল রোধে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, এক্ষেত্রে তরুণ বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবকদের অনুপ্রাণিত করে তাদের উদ্ভাবনকে কাজে লাগিয়ে খাদ্য ও ঔষধের মান নিরুপন করতে হবে। বিজ্ঞানাগারে খাদ্যমান নির্ধারণ ও পরিবেশ দূষণ উদঘাটন অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল ও জটিল প্রক্রিয়া বিধায় চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রয়োগ ঘটাতে হবে। শুধু আইন বা নীতি প্রণয়ন নয়, আইন প্রয়োগে ও পালনে সবাইকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের প্রত্যেকের অবস্থানগত নৈতিক ভূমিকা রয়েছে।
মুক্তবাজার অর্থনীতির উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল না হয়ে নিত্যপণ্য বিক্রয় ও সরবরাহে সরকারি ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। এর আগে অধিবেশনটি উদ্বোধন করেন, জাতীয় ট্রেড ও ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান (সচিব) ড. মইনুল খান। অধিবেশনে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ী সমাজের প্রতিনিধি বৃন্দ।